তারেক আজিজ: কাজে কিংবা ভ্রমণে, দেশের সীমানা অতিক্রম করতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম পাসপোর্ট করতে হবে। অনেকেই পাসপোর্ট করতে চান কিন্তু কি কি করতে হবে তা কিছুই জানেন না। আবার অনেকেই অনেক ঝামেলা মনে করে দালাল দিয়ে পাসপোর্ট করাতে চান। যার ফলে অনেক টাকা খরচ হয় আর অনেক ভুল ও অনিশ্চয়তা থাকে প্রসেসিং এর ব্যাপারে। অথচ আমি মনে করি পাসপোর্ট করা অনেক সহজ, সবাইকে নিজের পাসপোর্ট নিজেই করার পরামর্শ রইলো।
পাসপোর্ট করার ধাপ সমূহঃ-
ফি প্রদানঃ প্রথমেই আপনাকে ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সাধারণ ফি ৩৪৫০ টাকা (অফিসিয়ালি ২১দিন সময় নিলেও সাধারণত ১মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়), জরুরী ফি ৬৯০০ টাকা (অফিসিয়ালি ০৭দিন সময় নিলেও সাধারণত ১৫দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়)।
যে সব ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারবেন-
১। সোনালী ব্যাংক
২। ওয়ান ব্যাংক
৩। ট্রাস্ট ব্যাংক
৪। ব্যাংক এশিয়া
৫। প্রিমিয়ার ব্যাংকন
৬। ঢাকা ব্যাংক।
টাকা জমা দেওয়ার পর পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে একটা শ্লিপ দিবে। শ্লিপে একটা নাম্বার থাকবে সেটা পাসপোর্ট ফরমে লিখতে হবে।
ফরম পূরণঃ হাতে লিখে বা অনলাইনে ফরম পূনর করা যায়। হাতে লিখে ফরম পূরণ করতে চাইলে
http://www.passport.gov.bd/Report /MRP_Application_Form[Hard%20Copy].pdf
এই লিংক থেকে ভি.আই.পি. ফরম-১ ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে তারপর পূরণ করে নিবেন। আর অনলাইনে পূরণ করতে চাইলে http://www.passport.gov.bd/Application-1.aspx এই লিংকে গিয়ে স্টেপ বাই স্টেপ পূরণ করে প্রিন্ট করে নিবেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করলে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অতিরিক্ত লাইন ধরে আর আনলাইন করাতে হয় না, এতে সময়ও বাঁচবে 🙂 আর ফর পূরণের সময় অবশ্যই সব ডকুমেন্ট এর নাম ঠিকানার সাথে মিলিয়ে নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। না হয় পরবর্তীতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। ফরম পূরনের ১৫ দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে।
ফরম পূরণ পরবর্তী কার্যাবলীঃ নতুন পাসপোর্টের জন্য ০২ (দুই) কপি পূরণকৃত পাসপোর্ট ফরম দাখিল করতে হবে। ফরম পূরনের পর ২টা কপি করে নিতে হবে( ফটোকপি হলেও চলবে) এরপর ০২ কপিতেই নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট সাইজের (৫৫*৪৫ মিঃমিঃ) আঠা দিয়ে লাগিয়ে সত্যায়িত করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৫ বছরের কম) আবেদনকারীর ক্ষেত্রে তার পিতা ও মাতার একটি করে রঙিন ছবি (৩০ * ২৫ মিঃমিঃ) আঠা দিয়ে লাগিয়ে সত্যায়িত করতে হবে। ৬ বছরের কম বয়সের বাচ্চার 3R সাইজ ছবি তুলে নিয়ে যেতে হবে।
সাথে আরো যে সব কাগজপত্র সত্যায়িত করা লাগবে-
১। জন্মনিবন্ধন বা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি
২। স্টুডেন্ট হলে স্টুডেন্ট আইডির ফটোকপি
৩। চাকুরীজীবী হলে পরিচয় পত্রের ফটোকপি
৪। চেয়ারম্যান বা কমিশনার সার্টিফিকেটের ফটোকপি
সব কিছুই ০২(দুই) কপি করে, এর মধ্যে কোন কাগজ বাদ রেখে পাসপোর্ট অফিসে যাবেন না, যে কোন কাগজের জন্য ফিরিয়েও দিতে পারে।
যারা যারা সত্যায়িত করতে পারবেনঃ সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলরগণ, গেজেটেড কর্মকর্তা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও পৌর কাউন্সিলরগণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, নোটারী পাবলিক ও আধাসরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জাতীয় বেতন স্কেলের ৭ম ও তদুর্ধ্ব গ্রেডের গ্রেডের কর্মকর্তাগণ।
পাসপোর্ট অফিসে কাজঃ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার ভিতরে পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকেল ০৫টায় শেষ হয় কিন্তু ফরম জমা নেয় দুপুর ০২টা থেকে ০২ঃ৩০ পর্যন্ত। সকালে গিয়ে আগে সিরিয়াল দিলে খুব ই ভালো হয়, তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে পারবেন। অফিসে গেলে প্রথমে একজন অফিসার আপনার সব কাগজপত্র চেক করে দেখবে, সব ঠিকঠাক থাকলে হাতে পূরণ করা ফরমের লোকজনকে একটা রুমে পাঠাবে তাদের ফরম ডাটা অনলাইন করার জন্য, এরপর সেখানে কাজ শেষ হলে ছবি তোলার রুমে যেতে হবে। আর যারা অনলাইনে ফরম পূরণ করছে তাদেরকে সরাসরি ছবি তোলার রুমে পাঠিয়ে দিবে। ছবি তোলা, আঙুলের চাপ আর আপনার স্বাক্ষর দিতে হবে, *ছবি তোলার ব্যাপারে সাদা পোশাক, সাদা টুপি এবং চোখে চশমা গ্রহণযোগ্য না। সব কাজ শেষ করার পর আপনাকে একটা পাসপোর্ট ডেলিভারী স্লিপ দিবে; স্লিপ টা নিয়ে ভালো করে চেক করে দেখেবেন কোথাও কোন কিছু ভুল আছে কিনা, থাকলে সংশোধ করে নিবেন।
ডেলিভারি স্লিপ টা ফটোকপি বা মোবাইলে ছবি তুলে রাখবেন, হারিয়ে গেলে পাসপোর্ট নিতে গেলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। স্লিপ হারিয়ে গেলে ঐ স্লিপ নাম্বার দিয়ে থানায় জিডি করে পরে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনঃ যাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা একই তাদের ভেরিফিকেশন একবারেই শেষ হবে, আরা যাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা আলাদা আলাদা তাদের দুই ঠিকানাতেই ভেরিফিকেশন যাবে। পাসপোর্ট আবেদনের ০৫-০৮ দিন পর ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশ যাবে বর্তমান ঠিকানায়, এর ০৪-০৫ দিন পর যাবে স্থায়ী ঠিকানায়। পলিশ ভেরিফিকেশনে পুলিশকে টাকা প্রদান করা আইনত দণ্ডনীয় আপরাধ আপনি খুশী হয়ে কিছু দিলে অন্যব্যপার আবার জোড় পূর্বক টাকা চেয়ে বসলে কিছু করার থাকলে করবেন; না হলে টাকা দিতে হবে। অন্যথা আপনার ভেরিফিকেশনে ঝামেলা করলেও করতে পারে।
অনেক সময় ভেরিফিকেশনে অনেক সমস্যা হয়, সময় মতো ভেরিফিকেশন হয় না বা ভেরিফিকেশনের কপি সময়মত পাসপোর্ট অফিসে যায় না, সেক্ষেত্রে মালিবাগ এস. বি. হেড অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে বা মোবাইলে এস এম এস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পাসপোর্ট ডেলিভারিঃ
পাসপোর্ট রেডি হয়ে গেলে আপনার মোবাইলে এস এম এস আসবে , তারপর গিয়ে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিয়ে আসবেন। অনেক সময় এস এম এস আসেনা; তাই ডেলিভারির সময় অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে আসবেন বা দুই এক দিন পরে যেতে পারেন।
প্রয়োজনে http://www.passport.gov.bd/OnlineStatus.aspx লিংকে গিয়ে আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন, Application Status > Enrolment ID(ডেলিভারি শ্লিপে দেওয়া আছে)>Date of Birth> Captcha code>Search।