পঞ্চম দিনের উইকেটে স্পিনারদেরই ভরসা মানছে বাংলাদেশ। কাল জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট তুলে নিয়ে প্রাথমিক আয়োজনটাও সেরে রেখেছিলেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে আজ দিনের শুরুতে জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছে পেস আক্রমণ। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে প্লেইড অন হয়েছেন শন উইলিয়ামস। ১০০ পেরোনোর আগেই তৃতীয় উইকেট হারিয়ে ফেলেছে জিম্বাবুয়ে।
মোস্তাফিজের দেওয়া সে ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করছে জিম্বাবুয়ে। স্পিনের বিপক্ষে নড়বড়ে সিকান্দার রাজাকে নিয়েই ইনিংস মেরামতে নেমেছিলেন ব্রেন্ডন টেলর। এর মাঝেই অবশ্য খালেদ আহমেদের বলে এলবিডব্লু চেয়ে একটি রিভিউ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। তবে এ নিয়ে হতাশা বাড়ার আগেই তাইজুলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রাজা।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের স্কোর ৪ উইকেটে ১২৫ রান। টেলর অপরাজিত ২৫ রানে। পিটার মুরের সংগ্রহ ৪।
দলের চরম বিপর্যয়ে মাঠে নেমেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেললেন অনিন্দ্যসুন্দর এক ইনিংস। হাঁকালেন অনবদ্য সেঞ্চুরি। ১২২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ১০১ রান করেন তিনি। ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে এটি মিস্টার কুলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
অধিনায়কের তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। ৬ উইকেটে ২২৪ রান তুলে এ ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। মাহমুদউল্লাহ ১০১ ও মিরাজ ২৭ রানে অপরাজিত থাকে।
এতে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছে ৪৪২। চতুর্থ ইনিংসে এ রান তাড়া করে জিততে হলে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হবে জিম্বাবুয়েকে। ইতিহাসে এত রান তাড়া করে জেতার নজির নেই কোনো দলের। মিরপুরেও নেই।
টেস্টে সর্বোচ্চ ৪১৮ রানের টার্গেট তাড়া করে জয়ের কৃতিত্ব ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ কীর্তি গড়ে ক্যারিবীয়রা। শেরেবাংলায় সর্বোচ্চ ২০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ইংল্যান্ডের। ২০১০ সালে টাইগারদে হারিয়ে এ রেকর্ড গড়ে ইংলিশরা।
জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে ফেলবে নাকি বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামবে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে রাতভর অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে সফরকারীদের ফলোঅনে না ফেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে টাইগাররা। ২১৮ রানের এগিয়ে থেকে খেলা শুরু করেন তারা।
তবে শুরুটা শুভ হয়নি বাংলাদেশের। সকালের উইকেটে যথেষ্ট আর্দ্রতা ছিল। বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিলেন পেসারররা। একস্ট্রা সুইং ও বাউন্স করছিল। এ বেলায় একটু দেখেশুনে খেলা উচিত ছিল। তা সত্ত্বেও শট খেলার নেশা ছাড়তে পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরাও। ফলে কাণ্ডজ্ঞানহীন শট খেলে এসেছেন আর গিয়েছেন।
সূচনালগ্নেই কাইল জার্ভিসের জোড়া আঘাতে ফেরেন লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস।খানিক বাদে ডোনাল্ড তিরিপানোকে উইকেট উপহার দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন মুমিনুল হক।এতে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।সেই চাপের মধ্যে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মুশফিক।অযাচিত শট খেলতে গিয়ে তিরিপানোর বলির পাঁঠা হয়ে ফেরেন তিনি। ফলে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে মোহাম্মদ মিথুন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের প্রতিরোধ। পরিস্থিতি বুঝেশুনে খেলেন তারা। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে দারুণ মেলবন্ধন। ছোটান রানের ফোয়ারা। তাতে বাড়তে থাকে লিড। তবে হঠাৎ খেই হারান মিথুন। রান তোলার তাড়নায় সিকান্দার রাজাকে তুলে মারতে গিয়ে ফেরেন তিনি।
ফেরার আগে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি তুলে নেন মিথুন। ১১০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৬৭ রান করেন তিনি। এতে অভিষেকেই ফিফটি করার কীর্তি গড়েন এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। এরপর দ্রুত রান বাড়িয়ে নিতে এসেছিলেন আরিফুল হক। তবে তিনি পারেননি, সাজঘরের পথ ধরেন শন উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হয়ে।
একে একে টপঅর্ডারের সবাই ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান মাহমুদউল্লাহ। পরে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন মিরাজও। ফলে রানের চাকা ঘোরে দ্রুতগতিতে।
ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। চা বিরতির আগে শেষ বলে ব্রেন্ডন মাভুতার বলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এ নিয়ে সাড়ে ৮ বছর পর টেস্টে তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস খেলেন মিস্টার কুল। এর আগে ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। সেটিই ছিল ক্রিকেটের আদি ফরম্যাটে তার প্রথম ও শেষ সেঞ্চুরি।
এরপর মাত্র একবার আশির ঘরে যান মাহমুদউল্লাহ। চলতি বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৮৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।টেস্টে পরের সময়টা একদম বাজে কাটছিল তার। মিরপুর টেস্টের আগে সবশেষ ৯ ইনিংসে একটিতেও ফিফটি পাননি। এ শতক দিয়ে দলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া জায়গাটাও দৃঢ় করলেন তিনি।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫২২ রানের পুঁজির বিপরীতে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ৩০৪ রানে। ফলে ফলোঅনে পড়ে রোডেশিয়ানরা। ব্রেন্ডন টেইলরের লড়াকু সেঞ্চুরি (১১০) এবং পিটার মুর (৮৩) ও ব্রায়ান চারির (৫৩) অসাধারণ ফিফটিতেও ফলোঅন এড়াতে পারেনি তারা।যার বদৌলতে ২১৮ রানের লিড পায় টাইগাররা।
জিম্বাবুয়েকে এ পরিস্থিতিতে ফেলার নেপথ্য নায়ক তাইজুল ইসলাম। তিনি একাই শিকার করেন ৫ উইকেট। দিনটি ছিল তার জন্য বেশ স্মরণীয়। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ এবং টানা তিন ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান এ বাঁহাতি স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে এমন কীর্তি আছে কেবল এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানের।এদিন তাইজুলকে দারুণ সঙ্গ দেন মিরাজ। তার শিকার ৩ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড ডাবল সেঞ্চুরি (২১৯),মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি (১৬১) এবং মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটিতে (৬৮) রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ৫২২ রানে ইনিংস ঘোষণা করেন স্বাগতিক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৫ উইকেট নেন জার্ভিস।