কাজী শাহরিয়ার: পশ্চিমে নীল জলের বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, পূর্বে চা-বাগান, অভয়ারণ্য, ইকোপার্ক সমৃদ্ধ সবুজে সৃজিত হয়েছে নন্দনকানন। প্রকৃতি ৩৯২ বর্গ কিলোমিটারের বাঁশখালীকে সাজিয়েছে যত্ন করে।
চা-বাগানে অবারিত সবুজের হাতছানি, প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট স্বচ্চ জলের দীর্ঘ পাহাড়ী হ্রদে অজস্র পাখির বিচরণ, সমুদ্রের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার মিশেল অনুভূতির একই সাথে নিতে পারেন শুধু বাঁশখালীতেই!
শহর থেকে কাছেই, প্রকৃতির রুপ সৌন্দর্য এখানে নিজেকে সাজিয়েছে মনের মত করে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জায়াগা জুড়ে থরে থরে সাজানো বৈলগাও চা-বাগান শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ।ক্লোন চায়ের জন্যে এই বাগানে উৎপাদিত চায়ের কদর দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী। বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া জুড়ে অবস্থিত এই চা-বাগানের সৌন্দর্য পিয়াসী মাত্রই মুগ্ধ করে। বৈচিত্র্যময় পাহাড়ী টিলা গুলো দূর থেকে দেখলে মনে হবে ‘সবুজ টুপি’ পড়ে আছে।
৩লক্ষ ২৫ হাজার কেজি পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলা এই চা-বাগানে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করণ করার দৃশ্যটিও অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে দেখতে পারেন ভ্রমনকারীরা। সিটি গ্রুপের ব্যাবস্থাপনায় পরিচালিত এই বিস্তৃত চা বাগানটির সবুজের গালিচা পয়সা উসুল একটি দিন উপহার দিতে পারে নিমেষেই। সকালটি চা বাগানের সবুজাভ আথিতিয়তা নিয়ে বিস্মিত হয়ে আসতে পারেন বাঁশখালীর উপকূল জুড়ে ৩৫ কিলোমিটার বিস্তৃত একটানা সমুদ্র সৈকত টি অবলোকন করে।’ বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত’
খানখানাবাদ, কদমরসুল, কাথরিয়া, বাহারছড়া, রত্নপুর, সরল, গন্ডামারা সহ ছয় সাতটি পয়েন্ট সেজে আছে আপন রুপ মাধুর্যে। বিকেল হলে এখানে পর্যটকের ঢল নামে। ঝাউবাগানের শাঁ শাঁ দক্ষিণা হাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সারা বিকেল কাটিয়ে দিতে পারেন। বালুকাবেলায় একেঁ দিতে পারেন একটি বিকেল কাটানোর শিল্পিত চিহ্ন। এই সমুদ্র সৈকতটি প্রচারের আলো ও আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে কোনাংশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে পিছিয়ে থাকবেনা।
বাঁশখালী ইকোপার্ক একটি পরিপূর্ণ ট্যুর প্যাকেজ। খুব বেশি আলোচিত হয়নি বলে অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুটি রাঙ্গামাটি নয়, এই ইকোপার্কেই। প্রায় ৮কিলোমিটার দৈর্ঘের পাহাড়ি হ্রদ মোহনীয় আবেশ ছড়িয়ে দেয় পর্যটকের মনে। বোট রাইডিং, পিকনিক সেট, দ্বিতল রেস্ট হাউস, রিফ্রেশমেন্ট কর্ণার, সুউচ্চ অবলোকন টাওয়ার, ফেনোরোমিক ভিউ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, ভাসমান প্লাটফর্ম, সাসপেনশন ব্রীজ, মিনি জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র -কি নেই এখানে? একই সাথে প্রাকৃতিক সেগুণ বাগান, জুম ক্ষেত আর বঙ্গোপসাগরের ফেনিল জল রাশি দেখে মুগ্ধ হতে পারেন ওভারভিউ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে।
তাছাড়া, হাজার বছরের পুরনো স্থাপনা ‘বখশি হামিদ মসজিদ’, ঐতিহাসিক মলকা বানুর মসজিদ ও দিঘী, নাপোড়া অরগানিক ইকো ভিলেজ,লবণ ও শুটকি শিল্প, চিংড়ি মাছের ঘের, বাঁশখালীর বিখ্যাত লিচু বাগানও দেখে যেতে পারেন উপরি পাওয়া হিসেবে।
সকালটা চা বাগানে, দুপুরটা ইকোপার্ক-ইকোভিলেজ আর বিকেলটা সমুদ্রকে সপে দিয়ে মুগ্ধ গাহনে ফিরে আসা যায় শহরে
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে যেকোন পথে চট্টগ্রাম হয়ে বাঁশখালী যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিস ও ক্লোজ ডোর সার্ভিস নামে দুটি বাস ছাড়ে প্রতি ২০ মিনিট পর পর। মাত্র ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় বাঁশখালী ঘন্টা দেড়েকের দুরত্বে। মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন সারাদিনের চুক্তিতে। তারা আপনাকে সব গুলো স্পট একদিনেই ঘুরিয়ে আনতে পারে।
প্রচারের ব্যবস্থা , যোগাযোগ সেবার উন্নতি, মান সম্পন্ন স্থায়ী হোটেল মোটেল নির্মাণ, সামান্য সংস্কার কাজ বদলে দিতে পারে সমগ্র বাঁশখালী কে। গড়ে উঠতে পারে কক্সবাজারের মত আরেকটি পর্যটন এলাকা। বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হতে পারে এখান থেকেই। প্রয়োজন সরকারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সু দৃষ্টি ও আন্তরিকতার। বাংলাদেশ পেয়ে যেতে পারে আরেকটি পর্যটন শিল্পের বিশাল ক্যানভাস।
আমাদের উচিত তা পরিপাটি করেই রাখা।প্রকৃতি বাংলাদেশকে বড় মমতায় সাজিয়ে রেখেছে। আমরা একটু সচেতন হলে ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি’ করে গড়ে তুলা কঠিন কিছু না। আসুন চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি, নির্মল দৃশ্যগুলো মুগ্ধ করুক অতৃপ্ত চাহন।