রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি একজন নিরপেক্ষ লোক। আমি কাউকে ভোট দেওয়ার কথা বলতে পারি না। তবে আপনারা সেই দলকে ভোট দিবেন, যে দলকে ভোট দিলে দেশের সার্বিক কল্যাণ হবে। যে দল দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনাদের বুঝে-শুনে কাজ করতে হবে।
কিশোরগঞ্জে জেলা গণসংবর্ধনা কমিটির উদ্যোগে সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে সোমবার বিকেলে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বক্তব্য দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েই অনেকে জনগণকে আর মানুষ মনে করনে না। জনগণের ওপর মাতুব্বরি ফলায়। মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। তাই যে নেতা সৎ এবং মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকবে, এমন মানুষকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। যারা দুর্নীতি করে, ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা খেয়ে কাজ খারাপ করে, ঘুষ খায়, টিআর-কাবিখা বিক্রি করে খায়, মানুষকে মানুষ মনে করে না- এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত নয়।
আবদুল হামিদ আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, কিশোরগঞ্জের মাটি আমার রাজনীতির বিশ্ববিদ্যালয় ও তীর্থস্থান। কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ও ঋণী। আমার দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া,এটা কিশোরগঞ্জবাসীর অবদান এবং তাদের পাওনা। আমি জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা সহায়তা করেছে। তাদের সহায়তা ছাড়া আমার পক্ষে আজ বর্তমান জায়গায় আসা সম্ভব ছিল না। আমি যত দিন বেঁচে থাকি কৃতজ্ঞ চিত্তে এই তাদের সেবা করে যাব এবং এই ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করে যাব।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি পৃথিবীর যেখানেই গেছি কিশোরগঞ্জকে ভুলি নাই। কিশোরগঞ্জের স্থানীয় ভাষায় কথা বলেছি। কিশোরগঞ্জকে পরিচিত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছি।
সংবর্ধনা সভায় তাঁর আগে নেতাদের দেওয়া বক্তিতাই উথাপিত বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি বলেন, এসব দাবি আমারও প্রাণের দাবি। জেলায় অবিলম্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হবে। চলতি সফরেই আগামীকাল আমি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করে যাব। এ ছাড়া ভৈরবে রেলের বাইপাস নির্মাণ, নতুন ট্রেন চালু ও অন্যান্য ট্রেনে কোচের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বক্তৃতায় অসুস্থ জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।জেলা গণসংবর্ধনা কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য যথাক্রমে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক,সোহরাব উদ্দিন, আফজাল হোসেন ও দিলারা বেগম আছমা। জেলার পিপি শাহ আজিজুল হকের পরিচালনায় সভায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জেএসডির নেতারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতির সম্মানে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।তিনদিনের সফরের শুরুতে এর আগে আজ দুপুরে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারযোগে জেলা শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন।