অপরিকল্পিত নগরায়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দেশের কৃষিজমি দ্রুতই কমে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে কৃষিজমি সংরক্ষণ, ভূমির জোনভিত্তিক পরিকল্পনা এবং পাহাড়-টিলা, বন, জলাশয়ের ভূমি রক্ষায় ‘ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে সরকার। এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী অনুমোদন ব্যতীত কৃষিভূমি অকৃষিকাজে ব্যবহার ও কৃষিজমিতে বাণিজ্যিক আবাসন, রিসোর্ট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কারখানা নির্মাণ হবে অপরাধ। যার জন্য পেতে হবে শাস্তি।সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর গেজেট জারির মাধ্যমে এটি কার্যকর হবে।
কেন এ অধ্যাদেশ?
‘ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন, উন্নয়নমূলক কার্য, শিল্প-কারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রতিনিয়ত ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং দেশে কৃষি ভূমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষিভূমি সুরক্ষা এবং ভূমিরূপ ও ভূ-প্রকৃতি অনুসারে ভূমির জোনভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা সমীচীন। সেজন্য ‘ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’। এই অধ্যাদেশ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিনটি পার্বত্য জেলা ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হবে।
‘ভূমি ব্যবহার জোনিং ম্যাপ’ প্রণয়ন
অধ্যাদেশের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার কৃষিজমি সুরক্ষা ও জোনভিত্তিক ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভূমির বিদ্যমান ব্যবহার, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভূমিরূপ যথাযথভাবে পরীক্ষা করে অত্যাধুনিক ডিজিটালাইজড প্রযুক্তির মাধ্যমে ধারণকৃত প্রতিচ্ছবি যথাযথ বিশ্লেষণ করে এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে মৌজা, দাগ বা অন্য কোনো চিহ্ন বা সীমারেখা দ্বারা ‘ভূমি ব্যবহার জোনিং ম্যাপ’ (অতঃপর ‘জোনিং ম্যাপ’ বলে অভিহিত) প্রণয়ন করবে। এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ সংরক্ষণ করবে এবং নিয়মিত হালনাগাদ করবে। এই জোনিং ম্যাপ সমগ্র দেশের জন্য একই সাথে, পর্যায়ক্রমে অথবা কোনো বিশেষ ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে প্রণয়ন করা যাবে। সরকার জোনিং ম্যাপের সাথে স্থানিক পরিকল্পনার সামঞ্জস্য নিশ্চিত করবে।
ভূমি জোনিংয়ের শ্রেণিবিন্যাস
অধ্যাদেশের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকার ভূমিকে ১৮ শ্রেণিভুক্ত করবে। এই ধারায় বলা হয়েছে, সরকার জোনিং ম্যাপ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ভূমিকে ১৮ শ্রেণিভুক্ত করবে এবং জাতীয় স্বার্থে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণ বিবেচনায় প্রয়োজনে নতুন জোন সৃজন, বিদ্যমান জোন একত্রীকরণ, পৃথকীকরণ ও বিলুপ্ত করতে পারবে।
শ্রেণিগুলো হলো– ১. কৃষি অঞ্চল, ২. বিশেষ কৃষি অঞ্চল, ৩. কৃষি-মৎস্য চাষ অঞ্চল, ৪. নদী ও খাল, ৫. জলাশয়, জলাধার ও জলাভূমি, ৬. পরিবহন ও যোগাযোগ অঞ্চল, ৭. শহরে আবাসিক অঞ্চল, ৮. গ্রামীণ বসতি অঞ্চল, ৯. মিশ্র ব্যবহার, ১০. বাণিজ্যিক অঞ্চল, ১১. শিল্প অঞ্চল, ১২. প্রাতিষ্ঠানিক ও নাগরিক সুবিধা অঞ্চল, ১৩. বন ও রক্ষিত এলাকা অঞ্চল, ১৪. পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা/পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা, ১৫. সাংস্কৃতিক-ঐতিহ্য অঞ্চল, ১৬. পাহাড়-টিলা, ১৭. পতিত এবং ১৮. অন্যান্য।
সুরক্ষা বিধানগুলো
অধ্যাদেশের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো ও জেলা প্রশাসন ভূমির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে ভূমি সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে। সর্বশেষ প্রকাশিত বা বলবৎ ভূমি জরিপের স্বত্বলিপি ও সরেজমিন পরিদর্শনের ভিত্তিতে নিচের শ্রেণিগুলোর ভূমি কৃষিভূমি হিসেবে গণ্য করা যাবে– নাল, বিলান, ধানি জমি, বোরো, বালুচর, চর ভূমি, বীজতলা, বাগান, পান বরজ, ঘাসবন, পতিত, লায়েক পতিত, হোগলবন, নলবন, বাইদ, চালা, হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, নার্সারি, মাঠ, বেড়, দলা, বেগুন টিলা, মরিচ টিলা, ভিটি, ভিটা, ডাঙ্গা, ছোণখোলা, ভাগার, বাঁশঝাড়, গো-চারণ ভূমি, পুকুর পাড়, সহুরী, সাটিউড়া, আছারউরা, গভীর নলকূপ ও সমজাতীয় আবাদি ভূমি এবং সরকার থেকে সময়ে সময়ে নির্ধারিত যেকোনো শ্রেণির ভূমি।
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৮৩ ধারায় যা কিছুই থাকুক না কেন এই অধ্যাদেশের অধীনে সংজ্ঞায়িত সব কৃষিভূমি সুরক্ষা করতে হবে। এই অধ্যাদেশ জারির পর সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষিভূমি চিহ্নিত করে ভূমি ম্যাপিংয়ের কাজ শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে কৃষিভূমির তালিকা ও বিবরণ সংগ্রহ করবে।
এক, দুই, তিন, চার বা ততোধিক ফসলি জমি চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে মৎস্য চাষকে কৃষি বিবেচনা করে কৃষিভূমির শ্রেণি নির্ধারণ করতে হবে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা অর্থনৈতিক বিবেচনায় নির্দিষ্ট কৃষি পণ্য অথবা দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদিত হয় এমন কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ কৃষি অঞ্চল ঘোষণা করবে। বিশেষ কৃষি অঞ্চল ভূমি কৃষি ব্যতীত অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না।
বিশেষ কৃষি অঞ্চল বহির্ভূত দুই, তিন, চার বা ততোধিক ফসলি কৃষি ভূমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, সরকার জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও প্রত্নসম্পদ সন্ধান ও আহরণসহ অপরিহার্য অন্য কোনো জাতীয় প্রয়োজনে নিরপেক্ষ প্রভাব নিরূপণ সাপেক্ষে ন্যূনতম পরিমাণ কৃষিভূমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করতে পারবে। তবে আরও শর্ত থাকে যে, এমন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা অব্যবহৃত ভূমির ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং মোট কৃষিভূমির ১০ ভাগের বেশি অকৃষিকাজে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
এই অধ্যাদেশের কোনো বিধান অকৃষিভূমি কৃষিকাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে না। ইট ভাটায় বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য ভূমির উপরিভাগ, পাহাড়-টিলা এবং জলাধারের পাড়ের মাটি ক্রয়-বিক্রয়, অপসারণ, পরিবহন ও ব্যবহার করা যাবে না। বিদ্যমান আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে জলাধার বা জলাভূমি ভরাট করা যাবে না, পাহাড়-টিলা কর্তন করা যাবে না এবং প্রাকৃতিক বন, বন-বিরুদ্ধ কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কোনো আবাসন কোম্পানি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানা বা অন্য কোনো ব্যক্তি কৃষিভূমি, জলাধার ও জলাভূমি ভরাট করলে বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে এবং আইনি প্রক্রিয়ার অতিরিক্ত হিসেবে দায়ী ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে ভরাট করা মাটি ও স্থাপনা অপসারণ করতে বাধ্য থাকবেন।
সাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমি সুরক্ষায় সরকার এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করবে। ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকার থেকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত সর্বোচ্চ সিলিং প্রযোজ্য হবে। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৮৩ ধারায় যাই থাকুক না কেন, কৃষিজমি ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত ভূমিও এই অধ্যাদেশের বিধান অনুযায়ী সুরক্ষা করা হবে এবং সরকার থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদন ব্যতীত ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণ করতে জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে নিচের দায়িত্ব পালন করবেন। সেগুলো হলো– জোনিং ম্যাপ সমাপ্ত হোক বা না হোক কৃষিভূমির তালিকা প্রস্তুত ও সুরক্ষা; প্রচলিত আইন অনুসারে জলাধার, জলাভূমি, পাহাড়-টিলা, বন, বনভূমিসহ পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল ভূমির তালিকা প্রস্তুত, সীমানা নির্ধারণ ও সুরক্ষা; গো-চারণভূমির তালিকা প্রস্তুত এবং সংরক্ষণ; ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়ার আগে মাটির সুনির্দিষ্ট উৎস চিহ্নিতকরণ এবং সেই মর্মে ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা আদায়; ইটভাটায় ব্যবহারের জন্য পতিত জমির মাটি বা ড্রেজিংকৃত মাটি চিহ্নিতকরণ এবং এর বাইরে অন্য সকল প্রকার মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং এই অধ্যাদেশের অধীনে সরকার থেকে দেওয়া অন্যান্য আদেশ ও নির্দেশ প্রতিপালন।
কৃষিভূমিতে আবাসন ও অবকাঠামো
অধ্যাদেশের ১০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে নিজস্ব কৃষিভূমিতে বসতবাড়ি, উপাসনালয়, কবরস্থান, সমাধি, গুদামঘর, পারিবারিক ব্যবহারের জন্য পুকুর, কুটির শিল্পসহ বসতবাড়ির সাথে সম্পর্কিত স্থাপনাদি নির্মাণ করতে পারবেন। অনুমতি গ্রহণ না করে কৃষিভূমিতে স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করলে বা কৃষিভূমি অকৃষি কাজে ব্যবহার করলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ স্থাপনা, অবকাঠামো বা উপকরণ অপসারণের আদেশ দিতে পারবেন এবং এমন আদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর বাধ্যতামূলক হবে। জনস্বার্থে এবং অনুমোদনের শর্তাবলি লঙ্ঘন করলে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন বাতিল করতে পারবে।
শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন
১১ ধারায় বলা হয়েছে, কৃষিভূমি, পাহাড়-টিলা, জলাধার, জলাভূমি ব্যতীত বিদ্যমান অন্যান্য ভূমিরূপ অথবা জোনিংয়ে উল্লিখিত ভূমিরূপ পরিবর্তন করতে চাইলে বা জোনিং শ্রেণি বহির্ভূত কাজে ভূমি ব্যবহার করতে চাইলে এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। শ্রেণি বা ব্যবহার পরিবর্তনের কোনো অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে না এবং জনস্বার্থ, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে না মর্মে নিশ্চিত হতে হবে।
১২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার এই অধ্যাদেশের অধীন তার ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-দেরকে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য অর্পণ করতে পারবে।
অপরাধ ও দণ্ড
অধ্যাদেশের ১৪ ধারায় অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, এই অধ্যাদেশের অধীনে অনুচ্ছেদ ৭, ১০ ও ১১ লঙ্ঘন করে নিচের কার্যাবলি সম্পাদন অপরাধ বলে গণ্য হবে– অনুমোদন ব্যতীত জোনিং ম্যাপে উল্লিখিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন; অনুমোদন ব্যতীত কৃষিভূমি অকৃষিকাজে ব্যবহার; কৃষিভূমিতে বাণিজ্যিক আবাসন, রিসোর্ট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানা বা অনুরূপ স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ; ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগ বা পাহাড়-টিলার মাটি ব্যবহার; বিশেষ কৃষি অঞ্চল, জলাধার, জলাভূমি, পাহাড়-টিলা, বন ও বনভূমির ক্ষতিসাধন ও ভূমিরূপ পরিবর্তন এবং এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত কোনো আদেশ বা বিধি লঙ্ঘন।
অনুমোদন ব্যতীত জোনিং ম্যাপে উল্লিখিত ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের শাস্তি সর্বোচ্চ ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড; অনুমোদন ব্যতীত কৃষিভূমি অকৃষিকাজে ব্যবহারের শাস্তি সর্বোচ্চ ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড; কৃষিভূমিতে বাণিজ্যিক আবাসন, রিসোর্ট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারখানা বা অনুরূপ স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণের শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড; ইটভাটায় কৃষিজমির উপরিভাগ বা পাহাড়-টিলার মাটি ব্যবহারের শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।
বিশেষ কৃষি অঞ্চলের ক্ষতি সাধনের শাস্তি সর্বোচ্চ ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড এবং অতিরিক্ত হিসাবে ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনমূলক ব্যবস্থার নির্দেশ; জলাধার, জলাভূমি, পাহাড়-টিলা ও বনের ক্ষতিসাধন ও ভূমিরূপ পরিবর্তনের শাস্তি হিসেবে প্রচলিত আইনের শাস্তির বিধান অনুসৃত হবে। তবে অতিরিক্ত হিসাবে ক্ষতিপূরণ, ভূমির প্রকৃতি পুনঃস্থাপন, অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি ও স্থাপনা অপসারণ, বৃক্ষরোপণসহ প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া যাবে।
এই অধ্যাদেশের অধীনে প্রণীত কোনো আদেশ বা বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেওয়া হবে। এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত যন্ত্রপাতি, সরঞ্জামাদি জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া যাবে।
এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে কৃষিজমি ব্যবহার হচ্ছে এবং এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে তো জমির পরিমাণ কম। বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। কৃষিজমি যদি এভাবে কমে যায় খাদ্য ঘাটতি হবে। সেজন্য কৃষিজমির সুরক্ষায় মূলত এই অধ্যাদেশ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু কৃষিজমি নয়, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্যান্য জমি যেমন বন, পাহাড়, জলাশয় সেগুলোর সুরক্ষা দিতে চাইছি। এই অধ্যাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হয়ে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পেলে দ্রুতই কার্যকর করা হবে।








