‘আমার ফেসবুক আইডি রিপোর্ট হচ্ছে, কমেন্টে রেসপন্স করুন প্লিজ’ বা ‘আইডি ঝুঁকির মধ্যে আছে, স্টিকার কমেন্ট প্লিজ’- এ ধরণের অনেক স্ট্যাটাস ফেসবুকে প্রায়ই হয়তো চোখে পড়েছে।
ফেসবুক আইডি বাঁচাতে অনেকে দেয়া স্ট্যাটাসে বন্ধুরা মন্তব্য করেছেন, কিন্তু তা কি সত্যিই আইডি বাঁচাতে পারে?
যারা সেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাদের তালিকায় থাকা বন্ধুরা অসংখ্য মন্তব্য করে, স্ট্যাটাস দিয়ে সেই ফেসবুক আইডি রক্ষার চেষ্টাও করেছেন।
কিন্তু বাস্তবে এরকম মন্তব্য কতটা কাজে আসে? সত্যিই কি এসব স্টিকারের মাধ্যমে করা মন্তব্য ফেসবুক আইডি বাঁচাতে পারে?
বিবিসি বাংলার এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে, যিনি লিখেছেন , আজকে আইডিতে রিপোর্ট পড়ছে ৫৬টা , প্লিজ ১০০০ কমেন্ট দরকার। তার এই স্ট্যাটাসে কমেন্ট পড়েছে বারোশোর বেশি।
তিনি বলছেন, ”এখনকার একটি ট্রেন্ড হচ্ছে, যারা একটি চেতনা বা ভাবনাচিন্তার পক্ষের লোক, তার অন্য পক্ষকে টার্গেট করে ফেসবুকে রিপোর্ট করে। অনেক সময় স্বার্থ জড়িত কারণেও এটা ঘটে। তখন ফেসবুক থেকে নোটিশ আসে, লগইন করা সম্ভব হয়না। কিন্তু এভাবে কমেন্টের মাধ্যমে যদি অনেক মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়, তখন হয়তো সেটি আইডির পরিচিতর জন্য ভালো হয়।”
তিনি বলছেন, এই চিন্তা করেই তিনি ওই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন। একহাজার মন্তব্য চেয়েছিলেন, কিন্তু ভাবতে পারেনি যে সেটি বারোশো ছাড়িয়ে যাবে।
ফেসবুক ঘেঁটে এরকম আরো অনেকের স্ট্যাটাস দেখা গেছে। সেসব স্ট্যাটাসে যেমন কেউ নানা ধরণের মন্তব্য লিখেছেন, আবার কেউ শুধুমাত্র ইমোজি পোস্ট করেছেন।
আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী রায়ান কামাল নিজের ছবির সঙ্গে লিখেছেন, ‘আইডিতে রিপোর্ট হচ্ছে, কমেন্টে রেস্পন্স’ করুন। সঙ্গে চিন্তার ইমোজি।
বরগুনার একজন তরুণী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আইডি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, স্টিকার কমেন্ট প্লিজ’। সেখানে স্টিকার দিয়ে তার অসংখ্য বন্ধু-স্বজন কমেন্ট করেছেন, যার সংখ্যা কয়েকশো ছাড়িয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনাগ্রহী এই তরুণী বলছেন, কিছুদিন আগে তিনি ফেসবুক থেকে নোটিশ পান যে, তার আইডিতে কেউ প্রবেশ করার চেষ্টা করেছে। এরপর তার একজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি লেখেন, যাতে কোন কারণে আইডি হারিয়ে গেলেও সেটি পুনরুদ্ধার করা যাবে বলে তার আশা।
ফেসবুক কি বলছে?
এ বিষয়টি জানতে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, এই লেখা পর্যন্ত সংস্থাটি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
ফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখতে ফেসবুকের পাতায় বেশ কিছু পরামর্শ রয়েছে। তার মধ্যে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে বলা হয়। এর মাধ্যমে ফেসবুকে প্রবেশ করতে হলে দুইটি মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে যেমন প্রচলিত পাসওয়ার্ড দিতে হবে, তেমনি মোবাইলের মেসেজে আসা কোড বা অথেনটিকেটর থেকে পাওয়া কোড প্রবেশ করিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে ফেসবুক আইডির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছে ফেসবুক।
কিন্তু এরকম মন্তব্যে আদৌ কি কোন কাজ হয়?
এ ধরণের মন্তব্যের মাধ্যমে ফেসবুকে সংযোগ বাড়তে পারে, তবে আইডি রক্ষা বা নিরাপত্তার সঙ্গে এর কোন সম্পর্কে নেই বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশে ফেসবুক নিয়ে কাজ করে ইউল্যাবের একটি টিম ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’। এর উপদেষ্টা অধ্যাপক সুমন রহমান বলছেন, ”আমরাও খেয়াল করেছি যে, কিছুদিন পরে পরে এরকম স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনা ঘটছে। যারা এসব লিখছেন, তারা খুব ফেসবুক সেলিব্রেটিও নন। কিন্তু আইডি হ্যাকিং থেকে বাঁচাতে বা আইডির ঝুঁকি বাঁচাতে যেসব লেখা হচ্ছে, তার সঙ্গে ফেসবুকের কাজের আসলে কোন সম্পর্ক নেই। কারণ ফেসবুক এভাবে কাজ করে না।”
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ” কেউ যদি কারো ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে চায়, তাহলে সেটার সঙ্গে এভাবে স্ট্যাটাসে মন্তব্য করা না করার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তিনি নানা কৌশলে সেই চেষ্টা করবে। আবার ফেসবুকে রিপোর্ট করার কারণে কারো আইডি যদি ফেসবুক ব্লক করে দিতে চায়, সেজন্য নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ পাঠাবে, তারপর ব্যবস্থা নেবে। সেটা ফিরিয়ে আনারও নানা পদ্ধতি আছে। সুতরাং কমেন্ট করে সেক্ষেত্রে প্রভাবিত করার কোন ব্যাপার নেই। ”
সহজে জনপ্রিয়তা অর্জন বা নিজের প্রোফাইলে লাইক/কমেন্ট বাড়াতে অনেকে এ ধরণের কাজ করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারণ যারা এ ধরণের স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তারা কেউই ফেসবুকে খুব পরিচিত নন।
আরো পড়ুনঃ
যৌন উত্তেজক কথা বলায় শিক্ষককে ৪ মাসের জেল
জানা গেছে, ধামরাই পৌরসভার আইঙ্গন নতুন কুঁড়ি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম শ্রেণি কক্ষে ও স্কুলের বাহিরে সপ্তম শ্রেণির ৯জন ছাত্রীকে প্রায়ই বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত, কু-প্রস্তাব দিতেন। গত শনিবারও রোববার শ্রেণিকক্ষে ৯ ছাত্রীকে যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলেন। এতে ছাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। উপায় না পেয়ে ওই নয় ছাত্রী লিখিত ভাবে বিষয়টি ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবিরকে জানান। গতকাল রোববার পৌর মেয়র ওই নয় ছাত্রী ও প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলামকে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। পরে সবার উপস্থিতিতে ছাত্রীরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্তের অভিযোগ তুলেন। এসময় শিক্ষক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে। পরে ধামরাইয়ের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নাহিদ হাসান উপস্থিত হয়ে ওই ৯ ছাত্রী ও প্রধান শিক্ষকের জবানবন্দি নেন।
ঢাকার ধামরাইয়ে স্কুলছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও যৌন উত্তেজক কথা বলায় নতুন কুঁড়ি মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলামকে ৪ মাসের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। আজ সোমবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগরে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।
এক পর্যায় প্রধান শিক্ষক সাইদুল ইসলাম ওই ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করলে ভ্রাম্যমান আদালত তাকে চার মাসের জেলের রায় দেন। আজ সোমবার ওই শিক্ষকে কারাগরে পাঠান পুলিশ।
ধামরাই পৌর মেয়র গোলাম কবির জানান, স্কুলছাত্রী উত্ত্যক্তকারী সাইদুল ইসলাম শিক্ষক নামে কলঙ্ক। ভ্রাম্যমান আদালত তাকে চার মাসের কারাদন্ড দিয়ে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ^রী উপজেলার সাপখাওয়া গ্রামে। তার বাবার নাম রিয়াজ উদ্দিন। তিনি ধামরাই পৌর এলাকার আইঙ্গনে হালিম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।