দেশে দেশে শিক্ষকদের বেতন

0
6

শিক্ষাগুরুর পা ধুয়ে দেয়ার শিক্ষা দিয়ে গেছেন বাদশাহ নামদার। গুরু দক্ষিণা দিতে গিয়ে একলব্যকে হারাতে হয়েছিলো বুড়ো আঙ্গুল। এমন বহু গল্প এবং কল্পকাহিনী লেখা আছে ইতিহাসে। সব গল্পেরই মোর‌্যাল হলো, শিক্ষাগুরুর সম্মান।

পরাবস্তবতার কথা যদি বাদও দেই তাহলে দেখবো ভুটান চিকিৎসক ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বেতন দেয়। কোরিয়া, হংকং, জাপানে শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো। এর ফল কিন্তু তারা পাচ্ছে। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি সম্মান করে ফিনল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরবসহ বেশ কিছু দেশ। বাংলাদেশি টাকার হিসাবে তাদের মাসিক বেতন গড়ে আট লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা, যা বাংলাদেশের একজন শিক্ষকের কয়েক বছরের বেতনের সমান।

ভারতের শিক্ষকরাও বাংলাদেশের শিক্ষকদের চেয়ে বেশি বেতন পান। এখানে সরকারি প্রাথমিক ও এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন শুরু হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায়, আর পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের বেতন শুরু হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা থেকে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রারম্ভিক মাসিক বেতন প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, ভারতে ৩৫ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ২৭ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা, ভুটানে ৩৩ হাজার টাকা ও মালদ্বীপে ৬৩ হাজার টাকা। মাধ্যমিকে বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন ১৭ হাজার ৫০০ টাকা, ভারতে ৪০ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ৩০ হাজার টাকা, শ্রীলঙ্কায় ৩২ হাজার টাকা, নেপালে ৩৫ হাজার টাকা, ভুটানে ৩৯ হাজার টাকা ও মালদ্বীপে ৯০ হাজার টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষকরা বেশ পিছিয়ে। বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। গত ১৫ বছরে সরকার একাধিকবার শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন করে শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কয়েক হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন গ্রেড কয়েক ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদা পান। শুধু প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণির। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে জাতীয় বেতন স্কেলের শুধু মূল বেতন পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা প্রাথমিক শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। সবচেয়ে বেশি মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হয় প্রাথমিকে। তাদের বেতন-ভাতাও অন্যান্য শিক্ষকদের চেয়ে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এম তারিক আহসান প্রতিবেদককে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দুর্বল, সেটা ঠিক। তবে মাধ্যমিক এমপিওভুক্ত ও সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বেতনবৈষম্য রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের দায়িত্ব বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার অবকাঠামোতে বরাদ্দ বাড়লেই কিন্তু গুণগত মানের উন্নয়ন হবে না। শিক্ষকদের ক্ষমতায়ন, মান-মর্যাদা ও বেতন—তিনটিই সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরও স্মার্ট বাংলাদেশ হতে হলে শিক্ষকদের মর্যাদা আরো বাড়াতে হবে।’

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ২০১০-এর সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিক্ষার উন্নয়নে আগে শিক্ষকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি তাদের বেতন-ভাতাও সম্মানজনক হতে হবে। শিক্ষকদের জন্য আমরা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলেছিলাম, সেটার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। এখন দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন কাঠামোর সংশোধন আনা প্রয়োজন। নয়তো মেধাবীরা আগামীতে শিক্ষকতায় আসবেন না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here