প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল ও পদায়ন নিয়ে কিছু উপদেষ্টা পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন বলে মনে করে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা অভিযোগ তোলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সরকার প্রশাসনে রদবদলে একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, এতেও একটি বিশেষ দলের লোকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় বিএনপি নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থেই সরকারের উচিত নিজেদের নিরপেক্ষ রাখা। সরকার ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দলের নেতারা শিগগির প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করার পাশাপাশি উদ্বেগের কথাও জানাবেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপি প্রস্তুত। আগামীকাল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শতাধিক নেতার সমন্বয়ে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল যোগদান করবে। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সনদে স্বাক্ষর করবেন।
নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অক্টোবরের মধ্যেই ‘ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল’ প্রস্তুত রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে। এ জন্য সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক-বীমা থেকে শ্রেণি বা গ্রেডভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহ করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, সারাদেশে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার যে প্যানেল প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটির অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা জামায়াতপন্থি। এমন প্যানেল হলে নির্বাচনে তারা একটা বিশেষ দলকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখতে পারে। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সতর্কভাবে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে যাতে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নেতারা বলেন, কিছু কিছু উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও কার্যক্রমে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি জুলাই জাতীয় সনদসহ সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বলা হয়, সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলুক কিংবা এটি নিয়ে নতুন করে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হোক, সেটি বিএনপি চায় না।
দলটি মনে করছে, প্রশাসনিক যে রদবদল বা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, এতে একটি দলের লোকজনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তাদের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি। একই সঙ্গে একটি বিশেষ দলের লোকজনকে নতুন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। মাঠ পর্যায়ে দলের যে প্রচার-প্রচারণা রয়েছে, এতে ঘাটতি আছে বলে মনে করছেন নেতারা। প্রচারণায় আরও গতি আনার জন্য দলের মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে কীভাবে সক্রিয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজে লাগানো যায়, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে নানামুখী অপপ্রচার মোকাবিলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দলের প্রচার আরও জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শিগগিরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবে বিএনপি। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা চায় দলটি।
সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।